ইসলামের দৃষ্টিতে আইনজীবী
কমন কিছু কথা।
আমাদের প্রায় সময় কিছু কথার সম্মুখীন হতে হয়:
যেমন-
১। আইনজীবীর আয় হারাম।
২। আইন পেশা জায়েজ না।
৩। আইনজীবীরা মিথ্যা বলে, ইত্যাদি।
আজকের লেখাটা সেই প্রিয় ভাই, বন্ধু, চাচা, মামাদের জন্য। জানি এত বড় লেখা পড়ার মত ধৈর্য বা ইচ্ছেও করছে না,তবুও অনুরোধ করে বলছি একবার অন্তত পড়ুন।
ইসলাম একটি বিজ্ঞানময়, শাশ্বত, পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। মানব জীবনের এমন কোন দিক ও বিষয় নেই যা তাতে আলোচিত হয়নি। আজ এখানে আলোচনার অবতারণা করার চেষ্টা করেছি পেশা হিসেবে আইন পেশার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ।ন্যায়বিচার প্রদানই হচ্ছে আদালতের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য। আইনজীবী মামলা-মোকদ্দমায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিচারককে সাহায্য প্রদান করে থাকেন। সত্য প্রতিষ্ঠায় আদালতকে সাহায্য করা ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় বিরাট অবদান রাখার সমতুল্য। আদালতকে ব্যাখ্যা দেয়া, মক্কেলের স্বার্থে সত্য প্রতিষ্ঠা করা, ইসলামী দুনিয়ার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইমামে আজম হযরত আবু হানিফা (রঃ)-এর মাযহাবের ফেকাহের কিতাবসমূহে ওকালতের বাব বা ওকালতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। এ কিতাবসমূহের মধ্যে হেদায়া, শরহে বেকায়া, কানজুদ দাকায়েক, কুদুরী, মালাবুদ্দা, মিনহুম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ওকালতকে অস্বীকার করা মানে হলো হানাফী মাযহাবের কিতাবসমূহ থেকে বাব-উল-ওকালতকে রদ করে দেয়া। বিশ্বজোড়া সর্বজনগ্রাহ্য ফতোয়ার কিতাব ‘ফতোয়ায়ে আলমগিরি’, ‘ফাতহুল কাদির’, ফাতোয়ায়ে শামীসহ বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাবসমূহে ‘ওকালত’ ও এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত বয়ান রয়েছে। তাছাড়া কুত্বে দাওয়ান, মুজাদ্দিদে যমান, হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রঃ)-এর বেহেশতী জেওর-এর উকিল ও ওকালত সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে। প্রিন্সিপাল মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী (রঃ)-এর অনুবাদকৃত উক্ত পুস্তকের পঞ্চম খন্ডের ১৩৩ পৃষ্ঠায় কাউকে উকিল বানানোর বিবরণ শিরোনামে প্রদত্ত মাসায়ালায় উল্লেখ করা হয়েছে : মানুষ যে কাজ নিজে করার অধিকারী সে কাজ অন্যের দ্বারা করানোরও সে অধিকারী। একেই শরীয়াতের ভাষায় উকিল বানানো বলে। এখানে উকিলকে আমানতদার ও আমানতের খেয়ানত করাকে শক্ত হারাম বলা হয়েছে। উকিলকে মেহনতয়ানা যা কিছু দেয়া হবে, সেটার মালিক সে হবে। উকিলের কাজ করে মেহনতয়ানা চুকিয়ে নেয়া শরীয়াতে জায়েয আছে। মরহুম মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রঃ)-এর ওকালতি প্রসঙ্গে প্রদত্ত আলোচনায় অনুবাদক উক্ত পুস্তকের একই খন্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন ‘‘মনে করুন, আপনি একজনকে উকিল বানাইলেন আপনার এক মোকদ্দমা চালাইবার জন্যে। এক্ষেত্রে আপনিও এ কথা বলিতে পারবেন না যে, আমাকে মোকদ্দমায় জিতাইয়া দিতে হইবে এবং উকিলও একথা বলিতে পারবেন না যে, আমি নিশ্চয়ই মোকদ্দমায় জিতাইয়া দিব। অবশ্য জিতাইবার জন্যে প্রত্যেকের চেষ্টা হবে এই কথা সুনিশ্চিত। হারবার জন্যতো আর কেহ মোকদ্দমা করে না। কিন্তু এইরূপ শর্ত করা বা শর্ত লাগান অথবা মোকদ্দমা জিতাইবার বা জিতাইবার জন্য মিথ্যা সাক্ষী বানান বা ঘুষের আশ্রয় গ্রহণ করা হারাম, গোনাহ কবীরাহ্। অবশ্য বুদ্ধির তীক্ষ্ণতার দ্বারা, মস্তিষ্কের প্রখরতার দ্বারা ও বিদ্যার গভীরতার দ্বারা সত্যের সীমালঙ্ঘন না করিয়া ও অনেক সময় অনেক সূক্ষ্ম পয়েন্ট এমন বাহির করা, যাহা দ্বারা উকিলের কৃতিত্ব প্রমাণিত হয় মিথ্যা সাক্ষীও লাগে না। ফল কথা এই যে, সত্যের সীমা, ন্যায়ের সীমা, ধর্মের সীমালঙ্ঘন না করিলে, ওকালতি ব্যবসার দ্বারা পয়সা উপার্জন করা জায়েজ আছে। বিনা পয়সায় নিঃসহায়ের সহাযতা করিয়া দিলেও তাতে সওয়াব আছে। মুসলিম আইনবেত্তাগণ মামলা-মোকদ্দমায় উকিল নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে বহু গবেষণা করেছেন। প্রায় সকল মুসলিম আইনবেত্তাই বিচারব্যবস্থাকে সহজ করে ন্যায়বিচার প্রদানের পথকে সুগম করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/পক্ষের উপস্থিত-অনুপস্থিত সকল অবস্থায় মামলা-মোকদ্দমায় উকিল নিয়োগ করার বিষয়টি বৈধ বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত সহীহ আল-বুখারী-এর ২য় খন্ডের ৩৯০ পৃষ্ঠায় কিতাবুল ওকালত প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। হাদিসের আলোকে আলোচনায় সেখানে উল্লেখ আছে যে, উপস্থিত ও অনুপস্থিতিদের জন্য উকিল নিয়োগ করা জায়েয। কোন উকিলকে বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিকে কিংবা কোন কওমের সুপারিশকারীকে কোন বস্তু হেবা (দান) করা জায়েয। কিতাবুল ওকালতের উক্ত অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে যে, যদি কেউ কোন উকিল (ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি) নিয়োগ করে আর ঐ উকিল কোন কিছু ছেড়ে দেয় অতঃপর মুয়াক্কিল (উকিল নিয়োগকারী) তা অনুমোদন করে, তবে তা জায়েয, ‘উকিল’ এবং মুয়াক্কিল আদালতের প্রচলিত পরিভাষা দু’টি ও ইসলামী শব্দ বা পরিভাষা। আদালতে আইনজীবী আইনগত তথ্য উদঘাটনে, সাক্ষ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা প্রদান করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। কারণ, বিচারের নীতি হলো- প্রয়োজনে প্রতি ১০ জন অপরাধীর ৯ জনই ছাড়া পেয়ে যাবে তবুও যেন ১ জন নিরাপরাধ ব্যক্তির ভুলবশতঃ হলেও সাজা হয়ে না যায়। কেননা, প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তি দিতে গিয়ে যদি কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে শাস্তি কিংবা কারাভোগ করতে হয় তার চেয়ে বড় কোন অপরাধ হতে পারে না। এতে করে মানবাধিকার হয় ভূলুণ্ঠিত এবং সমাজে প্রতিশোধের জিঘাংসা ও অপরাধ-প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে বিচারকের দৃষ্টিতে যে সব সূক্ষ্ম ও ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র তথ্য ও তত্ত্ব ধরা পড়ে না আইনজীবীগণ নিজ নিজ পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করার মাধ্যমে বিচারকগণকে সত্য উদঘাটনে প্রচন্ডতম সহযোগিতা প্রদান করে মানবাধিকার সংরক্ষণে ভূমিকা রাখছেন। ফলে বিচারকগণ নিখুঁত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, আইনজীবীগণ নিরপরাধীকে যেমন সাহায্য করেন তেমনি অপরাধীকেও সাহায্য করেন, এ ধারণা সঠিক নয়। অপরাধীর পক্ষ সমর্থন করার মানে অপরাধীকে সমর্থন করা নয় বরং অপরাধীর বিরুদ্ধে অপরাধ করার প্রমাণ সন্দেহাতীত রূপে উপস্থিত করা হয়েছে কিনা তা নির্ধারণে আইনজীবীগণ বিচারককে সাহায্য করেন। একজন ভালো আইনজীবীর জেরাকে ওপেনহার্ট সার্জারির সাথে ও তুলনা করা যায়। কেননা এর ফলে আদালতের সামনে বাস্তব ও লুকায়িত তথ্য বেরিয়ে আসে। অর্থআয়ের জন্য সকল পথই বৈধ এ কথা একজন পরকাল বিশ্বাসী আইনজীবীর পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। মামলাবাজ, ধুরন্ধর শয়তানে ব্যক্তির অসৎ সাধনের জন্য ধর্মপ্রাণ আইনজীবী কখনো আল্লাহ প্রদত্ত তার মেধা শক্তিকে কাজে লাগান না তথা তাদের প্রশ্রয় দিতে পারেন না। যদি কেউ দিয়ে থাকেন সে ব্যাপারে তাকে স্রষ্টার দরবারে জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এ জন্য সমগ্র আইনজীবী ও আইন পেশাকে ‘হারাম’ বলা যেতে পারে না। আইনজীবী বিতর্ক সৃষ্টি করেন না। আইনের মাধ্যমে তর্ক মিটাতে ভূমিকা রাখেন মাত্র। একজন আদর্শ আইনজীবী বিচারককে আইন বা ঘটনা সম্পর্কে কোন চাতুরী বা মিথ্যা উক্তি দ্বারা ভুল বোঝাতে পারেন না। জেনে শুনে আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আদালতকে ভ্রমে পতিত করে মক্কেলের উপকার করার চেষ্টা তিনি কখনো করতে পারেন না। একজন কৌঁসুলী ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় নিজের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগান মাত্র। প্রতিটি মানুষের কথা বলা ও মতামত বা যুক্তিতর্ক ব্যক্ত করার আলাদা পদ্ধতি রয়েছে। কারো যুক্তিতর্ক খুবই তীক্ষ্ণ ও কৌশলপূর্ণ, আবার কারো খুবই সহজ-সরল। প্রতিটি মানুষ তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন। কেউ তীক্ষ্ণ, জোরালো কৌশলপূর্ণ যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে অধিকার সম্পর্কে সচেতন। অন্যদিকে কেউ এ গুণের অভাবে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে। বিচারকের সামনে নিজের যুক্তিতর্ক ব্যক্ত করে নিজের অধিকার আদায় ও ন্যায় বিচার পাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে কষ্টসাধ্য। কেননা একজন সাধারণ লোক সত্যটিকে সহজভাবে উপস্থাপন করার মতো জ্ঞানী নাও হতে পারেন। বিচারক প্রতিটি পক্ষের যুক্তি-তর্ক ও ঘটনার বর্ণনা শুনে প্রমাণ দেখে ন্যায়ানুগ বিচার বিশ্লেষণ করে রায় দিয়ে থাকেন। মামলা মোকদ্দমায় ঘটনার উপর জোরালো যুক্তি তর্কের উপর নির্ভর করছে ন্যায়বিচার। আর এই ধারণাটি আজকের নয়, পুরাকাল থেকেই মানুষের মাঝে বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে আমাদের সকল পথের পথ প্রদর্শক আল্লাহর প্রিয় রাসূল (সঃ) বলেন, তোমরা যখন আমার কাছে কোন বিষয়ে বিচার ফয়সালার জন্যে আস, সম্ভবত তোমাদের মাঝে কারো যুক্তি-তর্ক খুবই তীক্ষ্ণ ও জোরালো আবার কারো খুবই দুর্বল, আমি তোমাদের যুক্তি-তর্ক শুনেই বিচার করে থাকি। (বুখারী কেতাবুল হীল)। অন্যদিকে আইনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মুসলিম শাসন আমলেও আইন পেশার প্রচলন ছিল। বিশেষ করে মুঘল শাসন আমলে আইন পেশাজীবীদের প্রচলন পরিলক্ষিত হয়। তখনকার আইন পেশা বর্তমান পেশার মতো এত উন্নত না হলেও দেখা যায় মুফতীরা বিচার কার্যে বিচারকদেরকে সাহায্য করতেন। তাদেরকে আধুনিক যুগের এটর্নী জেনারেলের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এর আরেকটু পরে দেখা যায় মামলার পক্ষসমূহ পেশাদার আইনজ্ঞ দ্বারা মামলা পরিচালনা করতেন এবং তাদের উকিল বলা হতো। বলা যায়, মুসলিম শাসকদের সময়েই পেশাদার আইনজীবীদের বিকাশ ঘটে তবে আজকের আইনজীবী সমিতির মত সেকালে তেমন কোন সমিতি ছিল না। ফিকহে ফিরোজশাহী এবং ফতওয়ায়ে আলমগীরিতে উকিলের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে। শাহজাহানের আমলে সর্বপ্রথম সরকারি উকিল নিয়োগ করা হয় এবং আইন ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় প্রতিটি জেলায় সরকারি উকিল নিয়োগ করা হয়। তাদেরকে বলা হতো উকিল-ই শরয়ী। তাদেরকে প্রধান কাজী নিয়োগ দিতেন এবং কখনো প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতেন। সে সময় লিগ্যাল এইডেরও প্রচলন দেখা যায়। যেমন গরীব ও অসহায় মামলাকারীদের আইনগত সহায়তার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করা হতো। এতে বুঝা যায়, আইন পেশা ইসলামের অন্তরায় নয় এবং সত্যিকার আইন পেশা ইসলামের ইতিহাসের একটি স্বীকৃত পেশা। বিচারকার্যে আইনজীবীর অপরিহার্যতা বর্তমানে আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশায় পরিণত হয়েছে। এর কারণ, সমাজে বিরাজমান নানা রকম জটিল নিয়ম ও বিধি-বিধান এবং পদ্ধতির উপস্থিতি যা মানুষের মাঝে ক্রমবর্ধমান বিরোধ নিত্তি করে। আর এক্ষেত্রে একজন আইনজীবী অথবা আইন বিশেষজ্ঞ অথবা শরীয়ার দৃষ্টিতে আইন প্রতিনিধি তার মক্কেলের সমস্যা সমাধান ও বিরোধ নিত্তির দায়িত্ব নিতে পারেন এবং তাদেরকে সৎ পরামর্শ দানের মাধ্যমে নিজ নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতন করতে পারেন।
বিচারকার্যে আইনজীবীর অপরিহার্যতার কয়েকটি কারণ নিম্নরূপঃ-
১। অধিকাংশ মানুষ নিয়ম ও বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতন নয় এবং অনেকে আবার কর্মব্যস্ততার কারণে নিজেদের অধিকার সংরক্ষণের সময় পান না। এক্ষেত্রে একজন আইনজীবীই তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে পারেন।
২। অনেকে যথার্থ সাক্ষ্যপ্রমাণ ও আইনি প্রমাণাদির অভাবে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
৩। অনেকে আবার সামাজিক অবস্থানের কারণে সরাসরি কলহ বা বিতর্কে লিপ্ত হতে আগ্রহী হয় না।
৪। অনেকে দাফতরিক কাজের ব্যস্ততার জন্য আদালতে মামলা চালিয়ে যেতে পারে না।
উপরোল্লেখিত কারণসমূহ ছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে যার জন্য পেশা হিসেবে আইন অপরিহার্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আইনপেশা : অধিকাংশ ইসলামী পন্ডিত অন্যান্য পেশার ন্যায় আইনকে বৈধ পেশা হিসেবে সমর্থন করেছেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে: মুসা (আঃ) আরজ করলেন, ‘‘হে আমার রব! আমি তো তাদের একজনকে হত্যা করেছি। ভয় করছে, তারা আমাকে মেরে ফেলবে। আর আমার ভাই হারুন আমার চেয়ে অধিক বাকপটু। তাকে আমার সাথে সাহায্যকারী হিসেবে পাঠাও, যেন সে আমাকে সমর্থন দেয়। আমি আশংকা বোধ করছি যে, এই লোকেরা আমাকে অমান্য করবে’’। (আল কাসাস, ৩৩-৩৪)। আইনকে পেশা হিসেবে অনুমোদনের পেছনে অন্তর্নিহিত (হিকমাহ) রহস্যসমূহ ইসলামী শরীয়াহ্র উদ্দেশ্যই হল মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং তাদের জীবন থেকে কষ্ট ও দুর্ভোগ দূর করা। আইনের ক্ষমতায়নের অন্তর্নিহিত কারণ হলো যারা অসুস্থ অশীতপর বৃদ্ধ বা সম্মানিত ব্যক্তিদের ন্যায় মামলা-মোকদ্দমার কাজ করতে পারে না তাদেরকে সাহায্য করা। আইনপেশা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে থাকে। এর প্রধান লক্ষ্য হল বিচারকার্যে সাহায্য করা এবং নানাবিধ সমস্যা ও বিতর্কে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করা। আইনজীবীরা বিচারকার্য পরিচালনা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বিচারককে সাহায্য করেন। একজন সৎ ও বিবেকসম্পন্ন এবং সত্য প্রতিষ্ঠায় শংকিত নন এমন আইনজীবীর সাহায্য পাওয়া একজন মজলুমের মৌলিক অধিকার। আত্মরক্ষা করা যে কোন অভিযুক্ত ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজে কিংবা অন্য কাউকে তার আত্মরক্ষার কাজে নিযুক্ত করতে পারেন। আর এক্ষেত্রে একজন বিচারকের দায়িত্ব হল অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তার আত্মরক্ষার সকল আইনি সুবিধা প্রদান করা।
তারপরেও বলবো সকল পেশায়ই ভালোর সাথে সাথে খারাপ করার সুযোগ থাকে,সুতরাং নিজে ভালো থাকাটাই মূখ্য।