কালো গাউনের আদোপান্ত

কালো গাউনের আদোপান্ত

সাক্ষ্যাদির বাহিরে গিয়ে কোন মতামত বা রায় দিতে পারবেন না; অপরাধ বা ঘটনা সম্পর্কে একজন বিচারক বা এ্যাডভোকেটের ব্যক্তিগত জ্ঞান যাই থাকুক না কেন তিনি আদালতে উপস্থাপিত সাক্ষ্যাদির বাহিরে গিয়ে কোন

আইনজীবী এবং বিচারকবৃন্দগণকে কালো গাউন, কালো কোর্ট এবং সাদা ‘বো’ বা ব্যান্ড পরিধান করতে হয়। এরূপ পোষাক পরিধানের পেছনে দু’ধরনের তত্ত্ব প্রচলিত আছে। প্রথমত, কালো গাউন পরার অর্থ হলো যে, ‘আইন অন্ধ’।

বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত ‘আইন অন্ধ’ শব্দটির ব্যাখ্যা দাঁড়ায় যে, বিচারক এবং এ্যাডভোকেটগণ আদালতে প্রদত্ত

মতামত দিতে পারবেন না; উক্ত সাক্ষ্যাদির আলোকেই একজন এ্যাডভোকেটকে যেমন আদালতে বক্তব্য রাখতে হয়, তেমনি বিচারককে রায় লিখতে হয়। দ্বিতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী কালো গাউন পরিধানের কারণ হলো নিজের পরিচয়কে গোপন রাখা। এর দ্বারা বোঝানো হয় যে, আদালতে একজন আইনজীবী ভিন্ন সত্তা নিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করেন। কারণ তিনি নিজের কথা বলেন না, পেশাগত স্বার্থে বলেন তার মক্কেলের কথা।

কালো পোষাকের মধ্যে গলায় সাদা ‘বো’ বা ব্যান্ড ব্যবহারের কারণ হলো অন্ধকারের মধ্য থেকে সত্যকে বের করা এ পেশার মহান দায়িত্ব। অর্থাৎ ‘বো’ বা ব্যান্ড হলো সত্যের প্রতীক।

অতীতে এদেশেও ছিল এবং বর্তমানেও বৃটেনের আদালতগুলোতে বিচারকবৃন্দের গাউনের বা কোর্টের হাতা নিজেদের হাতের চেয়ে অনেক লম্বা করে তৈরী করা হয়; অর্থাৎ হাতা ঝুলতে থাকে। এর অর্থ হলো আইনের হাত এত দীর্ঘ যে, অপরাধী পৃথিবীর যে স্থানেই থাকুক না কেন তাকে সেখান থেকে ধরে এনে আইনের বিধান মানতে বাধ্য করা সম্ভব। অর্থাৎ আইনের হাত অপরাধীর জ্ঞান ও সীমার চেয়ে অনেক বড়।

অতীতে এদেশে ছিল এবং বর্তমানেও বৃটেন ও আমেরিকাতে বিচারকবৃন্দ মাথায় সাদা লম্বা পরচুলা পরিধান করেন। এর অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধা মাতার মত স্নেহপরায়ণা হয়ে তার সন্তানদের বিচার করতে বিচারালয়ে বসেছেন বিচারক, যেন কারো উপর কোন অন্যায় করা না হয়। কারণ দু’পক্ষই তার সন্তান এবং সে কারণেই দু’পক্ষের আবেদন তাকে শুনতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

wpChatIcon